বাউফলে পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না

বাউফলে পশুর হাটে  স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না

 মোঃ দেলোয়ার হোসেন: পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পশুর হাটগুলোতে লোকসমাগম বাড়ছে। তবে অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মুখে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও তাদের মুখে মাস্ক নেই, সামাজিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না। ক্রেতা-বিক্রেতারা একে অপরের গা ঘেষে দাড়িয়ে দর কষাকষি করছেন। হচ্ছে কেনা-বেচাও। হাটের দৃশ্য দেখে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রামন রয়েছে এমনটা বুঝার উপায় নেই। পরিবেশ একবারেই স্বাভাবিক। সাপ্তাহিক হাটের দিন গত সোমবার বিকালে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া বন্দরের পশুর হাটের এমন চিত্র দেখে যে কোন লোকেরই মনে হবে ‘এটা পশুর হাট নয়, যেন করোনার হাট’। গত এক সপ্তাহে একই চিত্র দেখা গেছে উপজেলার  বগা বন্দর , বিলবিলাস বাজার, কেশবপুর শিকদার বাজার, কনকদিয়া বাজার, কালিশুরি বন্দর ও নুরাইনপুর বাজারের পশুর হাটে ।
এ সব হাটে পশু কেনা-বেচা তুলনামূলক কম হলেও জনসমাগম ছিল উল্লেখযোগ্য। কালাইয়া হাট উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট। সাপ্তাহিক হাটের দিনে এ উপজেলা ছাড়াও  দশমিনা ও ভোলা জেলার কয়েকটি  উপজেলার পশু ব্যবসায়ী ও ক্রেতা- বিক্রেতারা  এই হাটে যাতায়াত করায় কয়েক হাজার লোকের সমাগম হয়। কিন্তু সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে চলতে দেখা যায়নি কাউকে। অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ছাড়াই হাটে এসেছেন। দু’একজনের মাস্ক থাকলেও কথা বলার সুবিধার্থে মুখ থেকে নামিয়ে রেখেছেন। হাটের প্রবেশ দরজায় রাখা হয়নি হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। হাট কমিটির পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চোখে পড়েনি।
কালাইয়া হাটে গরু বিক্রি করতে আসেন  কালাইয়া গ্রামের বাসিন্দা লিটু গাজী । মুখে মাস্ক নেই কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘পকেটে আছে।’ কথা হয় হাটে গরু বিক্রি করতে আসা উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামের জাফর মৃধার সঙ্গে। তিনিও মাস্ক পরেননি। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমাদের কিছুই হবে না।’  হাটে গরু কিনতে আসেন মদনপুরা গ্রামের আরেক বাসিন্ধা সাহাবুদ্দিন । তিনি বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই হাটে কেনাবেচা করতে আসেন। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো সুযোগ নেই।
অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন হাটগুলোতে ব্যাপক গরু আমদানি হলেও গরুর ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ বিক্রেতারা। দাশপাড়া গ্রামের জাহিদ হাওলাদার জানান, তিনি এক আবাল গরু বিক্রির জন্য কালাইয়া হাটে নিয়ে যান। আড়াই মন মাংস হবে গরুটির। গরুটির দাম উঠেছে ৪৩/৪৫ হাজার টাকা। অথচ গত বছর এই ধরণের গরুর দাম ছিল ৬৫/৭০ হাজার টাকা।
নাজিরপুর ইউনিয়নের ফারুক হাওলাদার জানান, গত বছর তার একটি গরুর দাম ৪৮ হাজার টাকা ওঠায় বিক্রি করেননি। ওই গরুটি এবছর বিক্রির জন্য কালাইয়া হাটে নিয়ে যান। দাম উঠেছে ৪০ হাজার টাকা। তিনি গরু বক্রি না করে বাড়ি নিয়ে এসেছেন।
সোবাহান নামের গরুর এক ফড়িয়া বলেন, ‘ এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের পকেটে টাকা নেই। অনেকেই কর্মহীন হয়ে পরেছেন। ধারদেনা করে চলছেন। তাই কোরবানী দিচ্ছেনা। এ কারণে গরু বিক্রি কম হচ্ছে। তাই বিক্রেতারা দামও কম পাচ্ছেন। গরুর হাঁটগুলোতে লোকসমাগম হলেও বিক্রি কম হচ্ছে। তবে শেষের দিকে গরুর হাট আরও জমে উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন।
কালাইয়া হাটের ইজারাদার জহির উদ্দিন প্যাদা বলেন, ‘সবাইকে স্বাস্থ্য বিধির কথা বলা আছে। কিন্তু মানুষ তা মানছে না। আসলে গ্রামের মানুষ সচেতন না, তাই স্বাস্থ্য বিধি রক্ষা করা যাচ্ছে না।’
বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন  বলেন,‘হাট ইজারাদারদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। ওই বৈঠকে প্রত্যেকটা হাটে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় মোট ১৬টি হাটের পূর্বানুমতি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাট মনিটরিং সেল বসানো হবে। নিয়ম না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে হাট বন্ধ করে দেওয়া হবে।